।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
উলিপুরে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও আধুনিকতার ছোঁয়ায় মাটির তৈরি তৈজসপত্রের চাহিদা কমে গেছে। মাটির তৈরি পণ্যের বিক্রি কমে যাওয়ায় পুঁজি নেই এ পেশার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের হাতে। ফলে এ পেশার সাথে জড়িত মানুষজন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কদর কমে যাওয়ায় অনেকে এই শিল্পকর্ম বাদ দিয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে বেছে নিয়েছে অন্য পেশা। অনেক কষ্টে বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রেখেছে হাতে গোনা কয়েকজন মৃৎশিল্পী। কালের বিবর্তনে হাতিয়া ইউনিয়নের শ্যামপুর কুমারপাড়া থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প। এ কারণে ভালো নেই মৃৎশিল্পীরা।
জানা গেছে, অতীতে অধিকাংশ মানুষ মাটির তৈরি তৈজসপত্র রান্নার কাজে ব্যবহার করত। মাটির কলসি, হাঁড়ি, সরা, কড়াই, বাটনা, কোলা, চাড়ি, ঝাঁঝরি, ব্যাংক ও কুয়ার পাটসহ নানান ধরণের মাটির তৈরি তৈজসপত্রের ব্যবহার ছিল গ্রাম জুড়ে। কিন্তু গ্রামেও আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন ব্যবহার হচ্ছে সিলভারের পাতিল, মেলামাইন, প্লাস্টিক, স্টিলের বাসন-কোসন, ইলেকট্রিক রাইচ কুকার, ব্লেন্ডার ও রুটি মেকার আরও কত কি। তাই একেবারেই কমে গেছে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের চাহিদা। ফলে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। এছাড়াও আঠালো মাটির অভাব ও জ্বালানির ব্যয় বৃদ্ধির ফলে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসঙ্গতির কারণে এই পেশার সাথে জড়িত পাল সম্প্রদায়ের মানুষরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিনে শ্যামপুর কুমারপাড়ার মৃৎশিল্পের কারিগর হরিশ চন্দ্র পাল, বিজয় চন্দ্র পাল, নৃপেন্দ্র নাথ, হরি চরণ ও পঞ্চানন চন্দ্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেত তারা। হাট-বাজারে মাটির তৈজসপত্র নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসতেন। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়াও শিশুদের খেলনাসহ গৃহসজ্জার শৌখিন বাহারি পণ্য তৈরি হত কুমারপাড়ায়। এখন আর এসব তৈরি হয় না। কম চাহিদা, যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে চরম সংকটের মুখে এই পেশা ছাড়ছেন তারা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে সরকারকে এগিয়ে আসার দাবি জানান তারা।
আরেক মৃৎশিল্পের কারিগর নরেশ চন্দ্র পাল জানান, আগে দূর্গাপূজার মেলায় প্রচুর মাটির পুতুল, খেলনা হাড়ি, চুলা ও মাটির ব্যাংকের অনেক চাহিদা ছিল। এখন এসবের বেশি চাহিদা আর আগের মত নেই। সামনে আমাদের দূর্গাপূজা কিভাবে পরিবার নিয়ে উৎসব পালন করব বড় চিন্তায় আছি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) কুড়িগ্রাম জেলার উপ-ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য উপজেলায় এই পেশায় জড়িতদের তালিকা করে সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করতেছি।
//নিউজ//উলিপুর//মালেক/অক্টোবর/০৪/২৩